আমার সুরমা ডটকম : বাংলাদেশে একদিকে যেমন প্রাইভেট টেলিভিশনের সংখ্যা বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে রেডিও। বর্তমানে চালু থাকা বেসরকারি বাণিজ্যিক এবং কমিউনিটি রেডিও গুলোর সঙ্গে শিগগিরই যুক্ত হচ্ছে আরও কিছু রেডিও প্রতিষ্ঠান। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যখন স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছে, ইন্টারনেটও সহজলভ্য হচ্ছে, তখন রেডিও তার আবেদন কতটা ধরে রাখতে পারছে? ঢাকার আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বেতারের কার্যালয়ে চলছে ব্যতিক্রমী একটি প্রদর্শনী। মোফাজ্জেল হোসেন নামে একজন রেডিও মেকার তার সংগ্রহে থাকা নানা সময়ের এবং নানা ডিজাইনের প্রায় সাড়ে চারশো রেডিও নিয়ে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন। মি. হোসেন বলছেন, “ছেলেবেলা থেকেই রেডিও সংগ্রহ করা আমার শখ। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার রেডিও সংগ্রহের প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিল। পাশাপাশি অন্যান্য সময়ের এবং ডিজাইনের রেডিও আমি সংগ্রহ করেছি।”
বেতার সবার জন্য সব সময়ে সবখানে-এই শ্লোগানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বুধবার পালিত হলো বিশ্ব বেতার দিবস। কিন্তু এখন প্রত্যন্ত এলাকায়ও পৌঁছে গেছে স্যাটেলাইট টিভি। আর ক্রমেই সহজলভ্য হচ্ছে ইন্টারনেট। সেক্ষেত্রে রেডিও তার আবেদন কতটা ধরে রাখতে পারছে- জানতে চেয়েছিলাম এই রেডিও প্রদর্শনী দেখতে আসা কয়েকজন শ্রোতার কাছে। তারা বলছেন, রেডিওর আবেদন থাকবেই। কারণ রেডিও সহজলভ্য, সহজে বহন করা যায়, মোবাইল ফোনেও শোনা যায়। রেডিও পথে চলতে চলতেই শোনা যায়। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ বেতারের পাশাপাশি এখন বেসরকারি বাণিজ্যিক রেডিওগুলোও ব্যাপক জনপ্রিয় আরজে বা কথাবন্ধুদের সাবলীল উপস্থাপনা খুব দ্রুতই শ্রোতাদের, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
রাজধানী ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বেশ কিছু কমিউনিটি রেডিও চালু হয়েছে, যেগুলো স্থানীয় মানুষের সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলছে। মূলধারার গণমাধ্যমের পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ের এই রেডিওগুলো শ্রোতাদের কতটা মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারছে-জানতে চেয়েছিলাম কমিউনিটি রেডিওতে কাজ করেন এরকম কয়েকজন কর্মীর কাছে। তারা বলছেন, কমিউনিটির মানুষের কথাগুলোই তারা তুলে আনছেন। মূলধারার গণমাধ্যম যেখানে পৌঁছাতে পারে না, কমিউনিটি রেডিও সেসব প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কথা গণমাধ্যমে তুলে আনছেন।
বাংলাদেশে বর্তমানে ১৪টি কমিউনিটি এবং ১১টি বেসরকারি প্রাইভেট রেডিও চালু রয়েছে। সম্প্রতি আরও বেশকিছু রেডিওর অনুমোদন দিয়েছে সরকার। কিন্তু এই রেডিওগুলো বাণিজ্যিকভাবে কতটা টিকে থাকতে পারবে-প্রশ্ন ছিল বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক কাজী আখতার উদ্দিন আহমেদের কাছে।
তিনি বলছেন, “আমি মনে করি রেডিও তার আবেদন ধরে রাখতে পারবে। কারণ যখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়, তখন অনেক জায়গায় টিভি বা পত্রিকা মানুষের কাছে পৌঁছে না। কিন্তু রেডিও ঠিকই পৌঁছে যায়। তাছাড়া এতগুলো রেডিও থাকার পরেও নতুন নতুন যে রেডিওর অনুমোদন দেয়া হচ্ছে, মানুষ যে রেডিওর লাইসেন্স নিচ্ছেন, তা থেকে তো এটা প্রমাণিত হয় যে, রেডিওর গুরুত্ব আছে এবং এটি লাভজনক।”
অন্যান্য গণমাধ্যমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রেডিওর সংখ্যা। আবার জাতীয় এবং স্থানীয় রেডিওর বাইরে আন্তর্জাতিক রেডিওরও অনেক শ্রোতা রয়েছে বাংলাদেশে। ফলে রেডিওর প্রতিদ্বন্দ্বী কেবল টিভি বা প্রিন্ট মিডিয়াই নয়, বরং রেডিওকে এখন প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে রেডিওর সঙ্গেই। সূত্র : বিবিসি।